বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৮ অপরাহ্ন

‘মন্ত্রীর ফোনের’ পর তালা দিয়ে মাদ্রাসা ছাড়লেন মাহফুজুল হক

‘মন্ত্রীর ফোনের’ পর তালা দিয়ে মাদ্রাসা ছাড়লেন মাহফুজুল হক

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রায় দুই যুগ ধরে রাজধানীর জামিআ রাহমানিয়া মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধের মধ্যে আজ সোমবার সকালে মূল ফটকে তালা দিয়ে মাদ্রাসা ছেড়ে গেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক। জানা গেছে, গতকাল রোববার রাতে সরকারের একজন মন্ত্রীর ফোন পান তিনি। এরপর সকাল সাড়ে আটটায় কিছুসংখ্যক শিক্ষক-ছাত্রের উপস্থিতিতে মাদ্রাসার সব দরজা-জানালা বন্ধ করে মূল ফটকে তালা দিয়ে বেরিয়ে যান।

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাহফুজুল হক বলেন, ‘গতকাল রোববার রাত ১টা ৫ মিনিটে সরকারের একজন মন্ত্রী ফোন করেছিলেন। মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘মাদ্রাসায় তালা দিয়ে চাবি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসানের হাতে পৌঁছিয়ে দিতে।’’ মন্ত্রীর কথার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা তালা দিয়েছি। এখন চাবি পৌঁছে দেব।’

প্রায় দুই যুগ জামিআ রাহমানিয়া মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে শায়খুল হাদিসের পরিবার ও মুফতি মনছুরুল হকদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। ১৯৮৬ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হয়। দুই পক্ষই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিল। একপর্যায়ে কমিটি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে তা আদালতে গড়ায়। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে আল্লামা আজিজুল হক মাদ্রাসাটির প্রধান মুরব্বি বা ‌‌শায়খ পদে ছিলেন। পরে কিছুদিন মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ২০ বছর ধরে শায়খুল হাদিসের ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক এর অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন। বর্তমানে কারাবন্দী হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকও এ মাদ্রাসারই শিক্ষক ছিলেন।

জানা গেছে, স্থানীয় তিনজন ব্যক্তি জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য ১৬ কাঠা জমি ওয়াক্ফ করেছিলেন। ওয়াক্ফ করার সময় দলিলে ওয়াকফকারীরা মোতোয়ালি হিসেবে থাকবেন, এমন কিছু ছিল না। তিনজন ওয়াকফকারীই মারা গেছেন। তবে জীবিত থাকতে ওয়াকফকারীদের একজন শায়খুল হাদিসদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাদের উচ্ছেদের জন্য ওয়াক্ফ এস্টেটে মামলা করেন। তিনি মুফতি মনছুরুল হকদের পক্ষ নেন। শেষ পর্যন্ত মনছুরুল হকেরা ওয়াক্ফ প্রশাসকের রায় পান। সে অনুযায়ী, ওয়াক্ফ প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে একাধিকবার দখলদারদের উচ্ছেদ করার আবেদন জানানো হয়। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেন মাহফুজুল হকেরা। মামলাটি এখনো বিচারাধীন।

মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার আগে সকালে মাহফুজুল হক ফেসবুক লাইভে জানান, তারা মাদ্রাসা ছাড়ার ব্যাপারে আদালত থেকে কোনো নোটিশ পাননি।

জানা যায়, মাহফুজুল হকের অনুরোধে এ বিষয়ে গতকাল রোববার রাতে বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মুফতি রুহুল আমিন, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ ও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদিসহ কয়েকজন আলেম বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে মুফতি মনছুরুল হককে থাকতে বলা হলেও তিনি যাননি।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন আলেম অভিযোগ করেন, সরকার মাহফুজুল হকদের উচ্ছেদ করবেই, এটাই সরকারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু তারা এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে উচ্ছেদ করতে কিছুটা অনাগ্রহী। সরকার চায়, মাহফুজুল হকেরা যেন নিজেরাই মাদ্রাসা ছেড়ে যান। বৈঠকে উপস্থিত থাকা আরেক আলেম জানান, তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে তারা এ বিষয়ে একতরফা কোনো সমাধানে জড়াবেন না। কারণ, এ রকম কিছু করতে হলে সরকার ও আদালতই যথেষ্ট। সেখানে শুধু শুধু তাদের জড়ানোর দরকার কী। তা ছাড়া তারা যতটুকু জেনেছেন, তাতে বিষয়টি এখনো আদালতে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি।

বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‌‘আমি কোন অধিকারে মাদ্রাসার চাবি নেব? বিষয়টি আদালতের। আমাকে চাবি নিতে হলে আগে বিষয়টি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং এর একটি রেজল্যুশন লাগবে। বিষয়টি বোর্ডের কাছে হাওলা করা হলে বোর্ড একটা সুন্দর সমাধানের চেষ্টা করবে।’ মাওলানা মাহমুদুল হাসান কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পাশাপাশি সরকার স্বীকৃত আল হাইআতুল উলয়ারও চেয়ারম্যান।

বর্তমানে জামিআ রাহমানিয়া মাদ্রাসায় ১২ শত ছাত্র এবং ৮০ জন শিক্ষক রয়েছেন বলে জানান মাওলানা মাহফুজুল হক। এ রকম টালমাটাল অবস্থায় মাদ্রাসাটির ছাত্র-শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত রাহমানিয়া মাদ্রাসার চাবি মাহমুদুল হাসানের কাছে পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে। তবে চাবি পৌঁছালেও রাখবেন না বলে জানিয়েছেন মাহমুদুল হাসান। এ ব্যাপারে মাহফুজুল হক বলেন, ‌‘মন্ত্রী আমাকে চাবি দিতে বলেছেন, এখন তিনিই এর সমাধান দেবেন।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877